নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৮ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 147 বার পঠিত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে-এমনটি ধরেই নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করছে বিএনপি। মাঠে নেমেছেন দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। রাজধানীসহ সারা দেশে দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অব্যহত রেখেছেন। দলীয় শৃঙ্খলা মেনে কে কার চেয়ে বেশি সাংগঠনিক তৎপরতা চালাবেন-তা নিয়ে চলছে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতর ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নিচ্ছেন নির্বাচনি প্রস্তুতিও। নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সঙ্গে ইফতার মাহফিল ও উঠান বৈঠকের মধ্য দিয়ে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত হয়ে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়ার আভাসও দিচ্ছেন কেউ কেউ। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন এলে সবাই তো মনোনয়ন চাইতে পারেন। যারা যেখানে কাজ করছেন তারা সেখান থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এটা রাজনীতির একটা অংশ। তবে মনোনয়নের বিষয়ে আলোচনার সময় এখনো আসেনি। নির্বাচনের সময় নির্ধারণ হলে বিষয়টি সামনে আসবে।
এদিকে মাঠপর্যায়ের নেতারা বলছেন, ১৫ বছর ধরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পায়নি। দেশ এখন স্বৈরাচার মুক্ত। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জনগণের মধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। সেই সুযোগে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। জনগণের আস্থা অর্জনে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে। দল থেকে ‘ক্লিন ইমেজ’ ও জনবান্ধব নেতাদের মনোনয়নের আভাস দেওয়া হয়েছে। জনগণও ক্লিন ইমেজ ও জনবান্ধব নেতারা মনোনয়ন পাবেন-এমনটা প্রত্যাশা করেন। এজন্য আগেভাগেই দলীয় নেতারা নির্বাচনি মাঠে তাদের কর্মপরিকল্পনার ‘ছক’ কষছেন। রমজানে বড় কোনো কর্মসূচি না থাকায় ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে কার্যত নির্বাচনি কার্যক্রম চলছে। অনেকই আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের সুখ-দুঃখের খবর নিচ্ছেন। মসজিদে মসজিদে নামাজ আদায়সহ মুসল্লিদের ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করছেন। এর মধ্যদিয়েই নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় শীর্ষ নেতারা।
জানা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে বর্ধিত সভা করে বিএনপি। ওই সভায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বক্তব্য শোনেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বক্তব্য ও দলীয় কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন হাইকমান্ড। সেখানে আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুকেও গুরুত্ব দেন তিনি। বিএনপির জন্য কেমন হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আগামীর পরিস্থিতি-সে প্রেক্ষাপটে নেতাদের নানা বিষয়ে সর্তক বার্তা দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তার বক্তব্যে আগামী নির্বাচনে কারা, কোন কোন যোগ্যতায় বিএনপির মনোনয়ন কারা পাবেন-তা একরকম স্পষ্ট বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারেক রহমানের দেওয়া নির্দেশনা ও দলীয় শৃঙ্খলা ইস্যুটি মাথায় রেখেই মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল যুগান্তরকে বলেন, সাংগঠনিকভাবে আগামীতে আমাদের যারা নির্বাচন করতে চান, তাদের অবশ্যই দলের প্রতি নিবেদিত হতে হবে। দল কিংবা সংগঠনে তার নিজের এলাকায় যেমন শক্ত অবস্থান থাকতে হবে, পাশাপাশি জনগণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকতে হবে। জনগণের কাছে একজন ভালো নেতা ও ভালো মানুষ হিসাবে পরিচিত হতে হবে। আগামীতে সেসব নেতা যারা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী, দক্ষতা আছে, এলাকার মানুষের সঙ্গে বিচরণ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে তাদের দল মনোনয়ন দেবে। আগামীতে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় ইতোমধ্যে তারা মাঠে নেমেছেন।
ভোলা-৪ আসন (চরফ্যাশন-মনপুরা) থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। তিনিও এলাকায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। অনেকটা নীরবেই সাধারণ মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। এছাড়া দলীয় ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতার মাহফিল কর্মসূচি পালন করছেন। নয়ন বলেন, দল সত্যিকার অর্থেই চায় জনগণের উপকার হয় এমন কিছু করার জন্য। আমি নীরবে নিভৃতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পক্ষে। পার্টি এখন যেটা চাচ্ছে, সেভাবেই কাজ করছি। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে নোয়াখালী-৫ আসনে সাংগঠনিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির পল্লি উন্নয়নবিষয়ক সহসম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। যদিও এটি তার নির্বাচনি এলাকা। দলীয় নির্দেশনা নিয়ে প্রতিদিনই ছুটছেন শহর থেকে গ্রামে, পাড়া-মহল্লায়। বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি বলেন, দল থেকে নোয়াখালী-৫ আসনে সাংগঠনিক সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছে। দলীয় নির্দেশনা মেনে সব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছি। বন্যাকালীন সময়ে প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে ত্রাণসামগ্রী পৌছে দিয়েছি। দুর্গাপূজায় ৩১ মণ্ডপে নিরাপত্তার পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছ বিনিময় ও ডোনেশনের ব্যবস্থা করেছি। বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৩টি উঠান বৈঠক করেছি। পৌরসভা, থানা, ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ে এসব বৈঠক হয়েছে। এখন রমজান। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষদের নিয়ে ইফতার মাহফিল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আমরা বিএনপির হয়ে কাজ করছি। সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে দল থেকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি সব সময়ই কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার মানুষের পাশে আছি।
Posted ৫:২৯ এএম | শনিবার, ০৮ মার্চ ২০২৫
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।